“তিনি কহিলেন”-র অন্যান্য অংশগুলো – পার্ট-2 | পার্ট-3
ধপাস মাঝে মাঝে খুব মজার মজার কথা বলে। মাঝে মাঝে আবার এমন প্রাপ্তবয়স্কদের মতো সাংঘাতিক গুরুগম্ভীর কিছু বলে বসে, যে সেগুলো কথা না বলে বানী বললেই মানাবে ভাল। উপরন্তুর, ওর এখন সেই ডেঞ্জারাস বয়েস, যে বয়েসে একটা আইনস্টাইন সুলভ কৌতূহল এবং নাছোড়বান্দা নিরন্তর প্রশ্নোত্তরের একটা ভিসিয়াস সাইকেলের ট্র্যাপে পড়ে বাড়ির বাকিরা আমরা মোটামুটি জেরবার, বা আতঙ্কিতও বলা চলে। আর তার সাথে চলে তাঁর নানান বেয়াদব আবদার, যেমন কিনা তাঁর এক্ষুনি, অর্থাৎ এক্ষুনিই, সান্টাক্লজের থেকে একটা বেবি চাই যাকে ও ঘুম পাড়াবে, পটি করাবে, এবং ওর ভাগের, অবশ্যই অপছন্দের, খাবারগুলো খাওয়াবে, ইত্যাদি। পার্কে গিয়ে যার তার বাচ্চাকে ধরে আনার অনেক চেষ্টা সে অলরেডি অনেকবার করেছে ও করে চলেছে। এবং সেটা মানুষ, কুকুর, পায়রা যাই হোক না কেন, তা নিয়ে ওর বিশেষ বাছবিচার নেই।
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম, ধপাসের এই বয়েসটার নানান কথা বা কম্মগুলো ধরে রাখবো নিজের মতো করে। যাতে বড় হলে ওকে বলতে পারি। সেই বৃহৎ ও মহৎ অসাধ্যসাধনের চেষ্টাতেই এই পোস্ট।
আর ভুমিকা নয়, এবারে সোজা ডাইভ!
ধপাস প্রথম বেড়াতে গেছিল ওর দশ মাস বয়েসে; দিঘায়। সেটা ২০১২ সালের জানুয়ারী মাস। আমি, আমার মা-বাবা, আর ধপাস। সেবার প্রথমবার দিঘায় বীচ ফেস্টিভ্যাল নাম দিয়ে কিছু একটা ব্যাপার হয়েছিল, ওই দিঘা বলে কি গোয়া নয় টাইপের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে। সেটা দেখতেই যাওয়া। সেই হাড় হিম করা শীতে মাঝরাত্তিরে ফাংশান-টাংশান দেখে ফিরে পরেরদিন সকালের সিনটা এরকম -
মা - বিক্রম ঘোষ কেমন করে তবলা বাজায়?
ধপাস সবলে দুহাত দিয়ে নিজের গাল, পা, বিছানা, সব চাপড়াতে লাগলো!
মা - তনুশ্রীশঙ্কর কেমন করে নাচ করে?
ধপাস আবার দুহাত তুলে নানানরকম পোজ করে দেখাতে লাগলো, বসে বসে। (দশ মাস, হাঁটা শেখেনি তখনো)
মা - অনুপম রায় কেমন করে গান গায়?
ধপাস (উৎসাহ ভরে, মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে) - ন্যাই, ন্যাই, ন্যাই (অর্থাৎ, একবার বল, নেই তোর কেউ নেই, নেই নেই)
কথা বলা শেখার পর তো আমাদের অবস্থা করুণ!
যখন ওর বছর দেড়েক, তখন আমরা ওর পাসপোর্ট করাতে গেলাম। কারণ দুই-য়ে প্লেন ফেয়ার বেড়ে যাবে, তার আগে একটা ছোটখাটো ট্যুর করে আসার প্ল্যান। পুলিস স্টেশন, যেমন হয় আর কি, ভেরিফিকেশানের জন্য আজ আসুন, কাল আসুন করছে। আমরা প্রায় মনে মনে হাত জোর করে মিন মিন করছি, চা-পানির বড় নোটটাও জমা পড়ে গেছে আগেই, তাও ঘুরিয়েই যাচ্ছে। শেষে একদিন গেলাম তেনাকে নিয়ে। সে আমার কোলে বসেই হঠাৎ বেশ জোর গলায় তিন-তিন খানা পুলিশের উদ্দেশ্যে বলে কি - চ্যায়েঞ্জ নিবি না ছায়া! (মানে, চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা!) হাতটা মুখে ধরলাম, সরিয়ে দিয়ে আবার রিপিট, আরও জোরে! আমি তো লক-আপের ভারি তালাটা দেখছি আর ভাবছি, এই ছিল কপালে!
আশ্চর্যভাবে, সেদিন কাজটা হয়ে গেল। দুদিনের মধ্যে পাসপোর্ট বাড়িতে।
তখন ওর বয়স বছর দুয়েক। খাওয়া নিয়ে সমস্যা তো লেগেই আছে। ছেলেভুলানো গল্প, টিভিতে কার্টুন, ইত্যাদি যাবতীয় বৃথা চেষ্টার পর আমি যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম -
- তুই যদি না খাস, বড় হবি কি করে?
- মাম, তুমি বড় হয়ে গেছ?
- হ্যাঁ তো।
- তাও তুমি এখনও রোজ রোজ খাও কেন?
আমার খুব চিন্তা ছিল ওর হিন্দি শেখা নিয়ে। মাসি, মানে যার কাছে ও সারাদিন থাকে, সে আমাকে প্রায়শই বলত, যে সোনা এতো কথা বলতে পারে, অথচ হিন্দি বলতে পারেনা বলে পার্কের অন্য বাচ্চাদের সাথে সেভাবে মিশতে পারেনা। সত্যি বলতে কি, মাসির সাথে যায় বলে অন্য বাচ্চাদের মায়েরা একটু এড়িয়েও চলে। ধপাস বুঝতে পারে। মাসি বলে, ও নাকি এগিয়ে গিয়ে অন্য মায়েদের হাত ধরে টেনে বলে - আমারও মাম আছে। আমার মাম অফিসে।
বলাই বাহুল্য, ওরা ওর বাংলায় বলা কথাটাও বুঝতে পারেনা।
অনেক সমস্যারই কোনো সমাধান হয়না। সেগুলো নিয়েই, বা চেপে রেখেই, চালিয়ে যেতে হয়। অপরাধবোধে নত হয়ে গিয়ে। থাক সে কথা।
যাই হোক, তার ওপর আবার বেশ কিছু বাঙালি, চাকরি ছেড়ে দেওয়া, মায়েদের কাছে আমি অলরেডি বাচ্চাদের হিন্দি না-জানা নিয়ে নিদারুণ সব গল্প শুনেছি। মানে, স্কুল থেকে ডেকে পাঠানো, বাচ্চাদের এক্সপ্রেস করতে না পেরে সাইকোলজিকাল সমস্যা, ডাক্তার, কাউন্সেলিং, ইত্যাদি সব ভয়াবহ উপাখ্যান।
অথচ, অদ্ভুতভাবে, অবিশ্বাস্যভাবে, সব সমস্যা না হোক, এই হিন্দি বলার সমস্যাটা ধপাস নিজেই কেমন সমাধান করে নিল। টিভি দেখে, অন্য বাচ্চাদের অবসারভ করে, বা হয়ত জাদুবলে। সত্যিই জানিনা। যখন ওর বছর আড়াই, ও আমার থেকে বেটার হিন্দি বলতে শিখে গেল। মানে, আমার হিন্দি খুবই খারাপ, তবুও!
উদাহরণ?
আপনে মুঝসে ওয়াদা করকে ওয়াদা নেহিন নিভায়ে হো। ম্যায় আপকো কভি মাফ নেহিন করুঙ্গি। ম্যায় ইস্কা বদলা লুঙ্গি।
ইত্যাদি ইত্যাদি...
আমি কেন, আমার বাবার মাথায় বন্দুক ধরলেও এতো হিন্দি একবারে বেরোবে না জাস্ট!
(আরও আসিতেছে...)
“তিনি কহিলেন”-র অন্যান্য অংশগুলো – পার্ট-2 | পার্ট-3
ধপাস মাঝে মাঝে খুব মজার মজার কথা বলে। মাঝে মাঝে আবার এমন প্রাপ্তবয়স্কদের মতো সাংঘাতিক গুরুগম্ভীর কিছু বলে বসে, যে সেগুলো কথা না বলে বানী বললেই মানাবে ভাল। উপরন্তুর, ওর এখন সেই ডেঞ্জারাস বয়েস, যে বয়েসে একটা আইনস্টাইন সুলভ কৌতূহল এবং নাছোড়বান্দা নিরন্তর প্রশ্নোত্তরের একটা ভিসিয়াস সাইকেলের ট্র্যাপে পড়ে বাড়ির বাকিরা আমরা মোটামুটি জেরবার, বা আতঙ্কিতও বলা চলে। আর তার সাথে চলে তাঁর নানান বেয়াদব আবদার, যেমন কিনা তাঁর এক্ষুনি, অর্থাৎ এক্ষুনিই, সান্টাক্লজের থেকে একটা বেবি চাই যাকে ও ঘুম পাড়াবে, পটি করাবে, এবং ওর ভাগের, অবশ্যই অপছন্দের, খাবারগুলো খাওয়াবে, ইত্যাদি। পার্কে গিয়ে যার তার বাচ্চাকে ধরে আনার অনেক চেষ্টা সে অলরেডি অনেকবার করেছে ও করে চলেছে। এবং সেটা মানুষ, কুকুর, পায়রা যাই হোক না কেন, তা নিয়ে ওর বিশেষ বাছবিচার নেই।
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম, ধপাসের এই বয়েসটার নানান কথা বা কম্মগুলো ধরে রাখবো নিজের মতো করে। যাতে বড় হলে ওকে বলতে পারি। সেই বৃহৎ ও মহৎ অসাধ্যসাধনের চেষ্টাতেই এই পোস্ট।
আর ভুমিকা নয়, এবারে সোজা ডাইভ!
ধপাস প্রথম বেড়াতে গেছিল ওর দশ মাস বয়েসে; দিঘায়। সেটা ২০১২ সালের জানুয়ারী মাস। আমি, আমার মা-বাবা, আর ধপাস। সেবার প্রথমবার দিঘায় বীচ ফেস্টিভ্যাল নাম দিয়ে কিছু একটা ব্যাপার হয়েছিল, ওই দিঘা বলে কি গোয়া নয় টাইপের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে। সেটা দেখতেই যাওয়া। সেই হাড় হিম করা শীতে মাঝরাত্তিরে ফাংশান-টাংশান দেখে ফিরে পরেরদিন সকালের সিনটা এরকম -
মা - বিক্রম ঘোষ কেমন করে তবলা বাজায়?
ধপাস সবলে দুহাত দিয়ে নিজের গাল, পা, বিছানা, সব চাপড়াতে লাগলো!
মা - তনুশ্রীশঙ্কর কেমন করে নাচ করে?
ধপাস আবার দুহাত তুলে নানানরকম পোজ করে দেখাতে লাগলো, বসে বসে। (দশ মাস, হাঁটা শেখেনি তখনো)
মা - অনুপম রায় কেমন করে গান গায়?
ধপাস (উৎসাহ ভরে, মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে) - ন্যাই, ন্যাই, ন্যাই (অর্থাৎ, একবার বল, নেই তোর কেউ নেই, নেই নেই)
কথা বলা শেখার পর তো আমাদের অবস্থা করুণ!
যখন ওর বছর দেড়েক, তখন আমরা ওর পাসপোর্ট করাতে গেলাম। কারণ দুই-য়ে প্লেন ফেয়ার বেড়ে যাবে, তার আগে একটা ছোটখাটো ট্যুর করে আসার প্ল্যান। পুলিস স্টেশন, যেমন হয় আর কি, ভেরিফিকেশানের জন্য আজ আসুন, কাল আসুন করছে। আমরা প্রায় মনে মনে হাত জোর করে মিন মিন করছি, চা-পানির বড় নোটটাও জমা পড়ে গেছে আগেই, তাও ঘুরিয়েই যাচ্ছে। শেষে একদিন গেলাম তেনাকে নিয়ে। সে আমার কোলে বসেই হঠাৎ বেশ জোর গলায় তিন-তিন খানা পুলিশের উদ্দেশ্যে বলে কি - চ্যায়েঞ্জ নিবি না ছায়া! (মানে, চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা!) হাতটা মুখে ধরলাম, সরিয়ে দিয়ে আবার রিপিট, আরও জোরে! আমি তো লক-আপের ভারি তালাটা দেখছি আর ভাবছি, এই ছিল কপালে!
আশ্চর্যভাবে, সেদিন কাজটা হয়ে গেল। দুদিনের মধ্যে পাসপোর্ট বাড়িতে।
তখন ওর বয়স বছর দুয়েক। খাওয়া নিয়ে সমস্যা তো লেগেই আছে। ছেলেভুলানো গল্প, টিভিতে কার্টুন, ইত্যাদি যাবতীয় বৃথা চেষ্টার পর আমি যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম -
- তুই যদি না খাস, বড় হবি কি করে?
- মাম, তুমি বড় হয়ে গেছ?
- হ্যাঁ তো।
- তাও তুমি এখনও রোজ রোজ খাও কেন?
আমার খুব চিন্তা ছিল ওর হিন্দি শেখা নিয়ে। মাসি, মানে যার কাছে ও সারাদিন থাকে, সে আমাকে প্রায়শই বলত, যে সোনা এতো কথা বলতে পারে, অথচ হিন্দি বলতে পারেনা বলে পার্কের অন্য বাচ্চাদের সাথে সেভাবে মিশতে পারেনা। সত্যি বলতে কি, মাসির সাথে যায় বলে অন্য বাচ্চাদের মায়েরা একটু এড়িয়েও চলে। ধপাস বুঝতে পারে। মাসি বলে, ও নাকি এগিয়ে গিয়ে অন্য মায়েদের হাত ধরে টেনে বলে - আমারও মাম আছে। আমার মাম অফিসে।
বলাই বাহুল্য, ওরা ওর বাংলায় বলা কথাটাও বুঝতে পারেনা।
অনেক সমস্যারই কোনো সমাধান হয়না। সেগুলো নিয়েই, বা চেপে রেখেই, চালিয়ে যেতে হয়। অপরাধবোধে নত হয়ে গিয়ে। থাক সে কথা।
যাই হোক, তার ওপর আবার বেশ কিছু বাঙালি, চাকরি ছেড়ে দেওয়া, মায়েদের কাছে আমি অলরেডি বাচ্চাদের হিন্দি না-জানা নিয়ে নিদারুণ সব গল্প শুনেছি। মানে, স্কুল থেকে ডেকে পাঠানো, বাচ্চাদের এক্সপ্রেস করতে না পেরে সাইকোলজিকাল সমস্যা, ডাক্তার, কাউন্সেলিং, ইত্যাদি সব ভয়াবহ উপাখ্যান।
অথচ, অদ্ভুতভাবে, অবিশ্বাস্যভাবে, সব সমস্যা না হোক, এই হিন্দি বলার সমস্যাটা ধপাস নিজেই কেমন সমাধান করে নিল। টিভি দেখে, অন্য বাচ্চাদের অবসারভ করে, বা হয়ত জাদুবলে। সত্যিই জানিনা। যখন ওর বছর আড়াই, ও আমার থেকে বেটার হিন্দি বলতে শিখে গেল। মানে, আমার হিন্দি খুবই খারাপ, তবুও!
উদাহরণ?
আপনে মুঝসে ওয়াদা করকে ওয়াদা নেহিন নিভায়ে হো। ম্যায় আপকো কভি মাফ নেহিন করুঙ্গি। ম্যায় ইস্কা বদলা লুঙ্গি।
ইত্যাদি ইত্যাদি...
আমি কেন, আমার বাবার মাথায় বন্দুক ধরলেও এতো হিন্দি একবারে বেরোবে না জাস্ট!
(আরও আসিতেছে...)
“তিনি কহিলেন”-র অন্যান্য অংশগুলো – পার্ট-2 | পার্ট-3
"এই মেয়েটা বাঁচলে পরে তবে..." ইত্যাদি।
ReplyDeleteAshirbad koro, ityadi :)
DeleteIn love with Dhopash!
ReplyDeleteMe too, from her side :)
DeleteHihihihi.... Shilnora khay ei meye?
ReplyDelete:D
DeleteSheta try korini, kintu amake oi ek haate kiney ityadi korar khomota rakhe!