Thursday, 24 April 2014

সুমনে...

তথাগত তাঁর নিঃসঙ্গতা দিলেন অস্তরাগে -


কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম কবীর সুমনকে নিয়ে লিখব। জানিনা কেন, এটা যতবার ভেবেছি, সাথে সাথে একটা অদ্ভুত অপরাধবোধ, একটা গ্লানি আমার গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে এসেছে। যেন কোন একটা অজ্ঞাত কারণে আমি ব্যাক্তিগতভাবে ওনার কাছে লজ্জিত, ক্ষমাপ্রার্থী। যেন কখনো একটা ঋণ ছিল ওনার কাছে, যেটা আজ অবধি শোধ করে ওঠা হয়নি। পাওনাদারের থেকে পালিয়ে বেড়ানো গোছের একটা সংকোচ অকারণে এবং অদ্ভুতভাবে আমাকে আচ্ছন্ন করে দিয়েছে, আমার হাত সরেনি, কলমের নিব থেকে কালির একটা আঁচড়ও পড়েনি, একটাও কথা মুখ ফুটে লিখে উঠতে পারিনি।



ব্যাপারটা নেহাতই অদ্ভুত। আমি ত কিছুই করিনি! ইন ফ্যাক্ট, উনি ত আমাকে চেনেনই না!


আমিও ওনাকে সেভাবে চিনিনা। মানে, একজন শিল্পীকে দূর থেকে তাঁর শিল্পের হাত ধরে, তাঁর গান শুনে হেসে কেঁদে রাতে না ঘুমিয়ে পায়চারি করে, যেভাবে যতটুকু চেনা যায় ততটাই, বা ততটুকুই, আমি ওনাকে চিনি, তার বেশি না। তার ওপর আবার শিল্পীকে তাঁর শিল্প দিয়েই চিনবো, সচেতনভাবে তাঁর ব্যাক্তিগতজীবন জড়িত স্কুপ বা ওনার ক্ষেত্রে আমার নিজস্ব মতে নেহাতই অবান্তর সক্রিয় রাজনৈতিক পরিচয়কে সযত্নে সরিয়ে রেখেই চিনবো, এই মানসিকতা থেকেই ওনার সম্বন্ধে সঙ্গীতোত্তর কৌতূহল আমার কোনোদিনই হয়নি। সেটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত রুচির প্রশ্ন।


কিন্তু, জানিনা কেন, আজকাল বেশ কদিন ধরেই মানুষ কবীর সুমনের কথা বড্ড মনে হচ্ছে, ওনার জন্য মনের ভিতরে একটা অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে। গলার কাছে একটা কান্না দলা পাকাচ্ছে; নিজের ওপর, নিজেদের ওপর একটা নিরর্থক রাগ কির'ম আমাকে ভিতর থেকে তাড়িয়ে ফিরছে। বড্ড রেস্টলেস লাগছে, কাউকে বোঝাতে পারছি না।


------------------------------------------------------------------


লোকটা এক অর্থে ভগবান, অন্তত আমার মতো নাস্তিকের কাছে। ওনার গান থেকে স্রেফ ক'টা পংক্তি তুলে নিয়েই এই কথাটা হাতেনাতে প্রমাণ করে দেওয়া যায় যে কোনোদিন।


শুধু গান কেন, ওনার জীবন দর্শন, ওনার সাহস? ওনার মতো বুকের পাটা তো কই আর একজন কারোরও দেখলাম না, যিনি ওর'ম করে বলতে পারেন - হ্যাঁ ভালবেসেছি, হ্যাঁ অবিশ্বাসী হয়েছি। আমার দরকার নেই জানার, কাকে এবং কেন, কতবার, বা কিভাবে। আমার সে রুচি নেই। কিন্তু ওনার সাহসটা আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি! ওনার সাধারণ হওয়া, রক্তমাংসের মানুষ হওয়ার মধ্যে যে বিশাল অসাধারণত্ব, তা দেখে আরেকজন সহ-মানুষ হিসেবে, সে হোক না যতই অসম, নিজেরও কোথাও যেন সাহসটা বাড়ে। মানুষের যাবতীয় দোষ, গুণ, রিপু, অপরিমিতি, আকুতি, সব স্বীকার করে নিয়ে, গ্রহণ করে নিয়ে, আঁকড়ে ধরে নিয়ে মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। মানুষ হয়ে বারবার জন্মাতে ইচ্ছে করে।  




একজন মানুষ যখন অপর আরেকজন মানুষকে মনুষ্যোত্তর করে তোলেন, তিনিও কি সে মুহূর্তে কিছুটা ভগবান হয়ে ওঠেন না?



------------------------------------------------------------------ 

তবে, আমার এই লেখাটা ওনার ভগবান হওয়া নিয়ে নয়, একেবারেই নয়। এটা নেহাতই ওনার মানুষটাকে নিয়ে।


আর তাছাড়া, উনি যতই ভগবান হন না কেন, ভদ্রলোকের নানা কথাবার্তা, লেখা, সাক্ষাৎকার পড়লে বা শুনলে এটা বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে উনি ঠিক সাধক নন। মানে, সঙ্গীত-সাধনার অর্থে বলছি না, সাধক অর্থাৎ লৌকিক রাগ, অভিমান, লোকে-কি-বলল, আমার-গানের-সময়-লোকে-কেন-সীট-ছেড়ে-উঠবে এসব নিয়ে বিড়ম্বিত না হওয়া, সেটা উনি নন। অন্তত এখনও। রাগ হলে ফেসবুকে ইয়া বড় বড় পোস্ট লেখেন, কেউ কমেন্ট করলে তার আবার ইয়া বড় বড় উত্তর, তস্য উত্তর, তস্য তস্য উত্তর দেন, ইত্যাদি। ইচ্ছাকৃত ভুল অর্থে বা সাংবাদিকসূচক বিশ্বাসঘাতকতায় কেউ আউট-অফ-কন্টেক্সট বক্তব্য ছেপে দিলে উনি রেগে যান। হ্যাঁ, এখনও।


এই ব্যাপারটা আমার সত্যিই অদ্ভুত লাগে! উনি এত জ্ঞানী, এত বিদ্বান, তবু এখনও চারপাশের ক্লীব মানুষের থেকে এত আশা রাখেন? এখনও আঘাত পান, অভিমান করেন। রেগে যান? উনি কি সত্যিই এখনও জানেননা, যে এই জীবৎকালে উনি স্রেফ কিচ্ছুটি পাবেন না? কেউ বুঝবে না, কেউ বুঝলেও স্বীকার করবে না উনি আসলে কি? উনি কি জানেননা, যে বাকি জীবনটুকু উনি কষ্টেই কাটাবেন?


------------------------------------------------------------------


ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড? কি হবে ওসব দিয়ে!



কবীর সুমন, 


যদি আপনি সত্যিই জানতে চান লোকে আপনাকে বুঝলো কিনা, তাহলে আপনাকে আবার একবার আসতে হবে। জাতিস্মর হয়ে। আজি হতে শতবর্ষ পরে।


আর ততদিন অবধি আপনি, যিনি আমাদের জাতির গর্ব হতে পারতেন, আমাদের জাতির লজ্জা হয়েই থেকে যাবেন। ততদিন আমি, আমরা, আমাদের ছেলেমেয়েরা, তাদের ছেলেমেয়েরা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমরা সকলে প্রত্যেকে লজ্জিত হয়েই থেকে যাবো। আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে থেকে যাবো। মুখ লুকিয়ে, মাথা নীচু করে ঘুরে বেড়াবো, আপনার চোখে চোখ রাখতে পারবো না। আপনার গান শুনে ভাসবো, কাঁদবো, ভালবাসবো, আর ভীষণ, ভীষণ ঋণ বোধ করব। কিন্তু কিচ্ছু করতে পারবো না।



ক্ষমা করবেন আমাদের। চেষ্টা করবেন, অন্তত?


সাপ-লুডো খেলে যান বিধাতার সঙ্গে... কি হবে এসব নিয়ে ভেবে?


এসবের অনেক, অনেক ঊর্ধ্বে আপনি। অনেক! 


2 comments:

  1. I have a doubt. And I surely understand that the contexts are very different. But it will be great if you can please help me here.
    2 days back you wrote a blog/protest on article written by Nabanita Debsen, wherein she says that a woman, when writes a book/article on nudism or sex of an elderly woman with a young male, readers start associating the characters of the story with the writer, especially when the writer is a female.
    This definitely is true.
    Similarly, when a lyricist writes songs which depicts courage, protests against oppression, love, loyalty, socialism, do you feel that people starts to think that this lyricist/singer is a socialist or a patriotic or a bold person? And although some readers try to keep their minds away from the political lineage or personal life stories/rumors that that author carries, I am not very sure how successful they succeed.
    And again, there is nothing wrong in it. But, just a question, where logic dominates emotion.

    ReplyDelete
  2. Good question. Let me share what I think of it.

    In short, of course, there is a big difference between fiction and nonfiction, and interviews, biographical writing falls in later.

    If I think at the next level, at the cost of generalising, i think artists many a times express or depict what their core beliefs or principles are, what they think as rights or wrongs, etc. However, simplifying that to the extent of individualizing and personalising the stories in search of personal life stories, reflecting them often in light of sympathy or scandals etc, is indeed an uncalled for practice.

    ReplyDelete

Did you like it? Did you not? Please leave a comment...