This has been published in a Bengali Magazine called "Shukhi Grihokone"
বিতানের সাথে সেদিন হাঁটতে হাঁটতে অনেকদুর চলে গেছি। কথা বলতে বলতে এ-গলি সে-গলি পেরিয়ে কখন যে রাস্তা হারিয়েছি, দুজনের কেউই খেয়াল করিনি। খেয়াল যখন হল, তখন বেশ গাঢ় সন্ধ্যেবেলা। আর তার সাথে লোডসেডিং, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুনেও শুনব না করে শুনতে পাচ্ছি, মেঘের ডাকটা বাড়ছে, ধুলোর ঝড়টাও শুরু হয়ে গেছে, এবং অবধারিতভাবে আর একটুক্ষণের মধ্যেই তেড়ে বৃষ্টিটা নামবে। কিচ্ছু করার নেই!
পাড়াটা নতুন, বিতান বাড়িটা সবে ভাড়া নিয়েছে, আজ সকালেই চাবি পেয়েছে হাতে। পেয়েই ফোন। আমিও ঝোঁকের মাথায় অফিস ফেরত বাড়ি না গিয়ে যা হোক একটা কিছু বলে বাড়িটা দেখতে চলে এসেছি। আর তাছাড়া, বিতানকে যতটা চিনি, এসব পর্দা, পাপোষ, বিছানার চাদর টাইপের দৈনন্দিন জিনিসপত্র কিনতে গিয়েও ছড়িয়ে লাট করবে, তাই আসতে আমাকে হতই।
ঢোকার সাথে সাথে বিতান বলে - "ওসব চাদর-টাদর ছাড়, আগে তো চা বানানোর একটা ব্যবস্থা করা দরকার।" তা তো ঠিকই! তা সেই চক্করেই স্টোভ, চা-পাতা, চিনি, দুধ কিনতে বেরিয়েছিলাম। তারপর যা হয় আর কি, পাড়ার মোড়ে একটা চায়ের দোকানের মাসিকে ঘুম থেকে তুলে দোকানের ঝাঁপ খুলিয়ে হাতে চায়ের ভাঁড় নিয়ে কথা বলতে বলতে নিরুদ্দেশ যাত্রার মত হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যে এসে পড়েছি আর ক'টা যে বেজে গেছে, খেয়ালই করিনি। আর বৃষ্টি হলেও হতে পারে ভেবে ছাতা নিয়ে বেরোনোর মতো প্র্যাক্টিকাল সেন্স, বলাই বাহুল্য, আমার বা বিতানের কারোরই নেই।
বৃষ্টিটা নামবো নামবো করছে অনেকক্ষন ধরেই।
- "আচ্ছা শোন টুয়া, আমরা যে রাস্তা হারিয়েছি যে সেটা বুঝতে পারছিস তো?"
- "তোর বাড়ি, তুই চিনবি না?"
- "আমার বাড়ি হবে, এখনও হয়নি গাধা! সবে তো সকালে চাবি পেলাম। আমাকে দোষ না দিয়ে এখন কি করব তাই ভাব।"
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে হেসে ফেলতেই বৃষ্টির প্রথম ফোঁটাটা পড়ল, বিতানের চশমার ডানদিকের কাঁচে। দ্বিতীয়টা, আমার কব্জিতে। কব্জিটা তুলে নাকের কাছে এনে জোরে নিঃশ্বাস নিলাম একবার।
- "দেখ বিতান, সিজনের প্রথম বৃষ্টির কিন্তু একটা আলাদা গন্ধ থাকে। খুব ফ্রেস। লেবু পাতার মতো।"
- "তুই আর বড় হবি না কোনোদিন, টুয়া!"
কুড়ি বছর ধরে কম করে কুড়ি হাজারবার রিপিট করা ডায়ালগটা আরো একবার রিপিট করল বিতান। কেন যে ছাই বলতে যাই, কে জানে!
রাগ করে তেড়েফুঁড়ে একটা জবাব দিতে যাবো, তখনি লিটারেলি আমার রাগটা জল করে দিয়ে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টিটা ঝেঁপে নামলো। অঝোরে।
মুখটা আকাশের দিকে তুলে চোখ বন্ধ করে আরেকবার জোরে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে দুটো জিনিশ একসাথে টের পেলাম। এক, কাছাকাছি কোথাও একটা কদম গাছ আছে; এবং দুই, আশেপাশে কোন বাড়িতে জমিয়ে রগরগে করে মাটন রান্না হচ্ছে। দুটো এইর'ম বিপরীতধর্মী অথচ প্রানাধিক প্রিয় টাইপের গন্ধে ভিজে একাকার হতে হতে হঠাৎ এবারে চেতনা ফিরল।
- "বিতান, তুই সত্যিই বাড়ি ফেরার রাস্তা চিনতে পারবি না?"
- "না। বললাম তো!"
- "মানে?"
- "মানে, আমরা হারিয়ে গেছি। কিচ্ছু করার নেই।"
- "অদ্ভুত কথা! এখন উপায়?"
- "জানিনা। বোর করিস না, ভিজতে দে। কতদিন পর বৃষ্টিতে ভিজছি বলত?"
তা তো বটেই!
ভিজলাম, খুব। সেই কুড়ি বছর আগের মতো করে। আকাশের দিকে মুখ করে, দু' আঁজলায় ভর্তি করে জল ধারণ করে; মাথায়, চুলে এদিক-ওদিক থেকে উড়ে আসা খড়কুটো, ভিজে পাতা, ফুলের ছেঁড়া পাপড়ি বন্দি করে নিয়ে।
তারপর?
তারপর ভিজে একশা হয়ে চপচপে জামাকাপড়ে এ- পাড়া সে পাড়া ঘুরে মিষ্টির দোকান, চায়ের স্টল, রিকশাওয়ালাদের যৌথ সাহায্যে কোনোমতে বাড়ি ফিরলাম সেদিন।
xxxxxxxxxxxxxxxxxxx
বাড়িটা আমরা সেদিন খুঁজে পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু সেই হঠাৎ হারিয়ে যাওয়াটা আমি পরে আর কোনদিনই খুঁজে পাইনি।
তুই পেয়েছিস, বিতান?
বিতানের সাথে সেদিন হাঁটতে হাঁটতে অনেকদুর চলে গেছি। কথা বলতে বলতে এ-গলি সে-গলি পেরিয়ে কখন যে রাস্তা হারিয়েছি, দুজনের কেউই খেয়াল করিনি। খেয়াল যখন হল, তখন বেশ গাঢ় সন্ধ্যেবেলা। আর তার সাথে লোডসেডিং, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুনেও শুনব না করে শুনতে পাচ্ছি, মেঘের ডাকটা বাড়ছে, ধুলোর ঝড়টাও শুরু হয়ে গেছে, এবং অবধারিতভাবে আর একটুক্ষণের মধ্যেই তেড়ে বৃষ্টিটা নামবে। কিচ্ছু করার নেই!
পাড়াটা নতুন, বিতান বাড়িটা সবে ভাড়া নিয়েছে, আজ সকালেই চাবি পেয়েছে হাতে। পেয়েই ফোন। আমিও ঝোঁকের মাথায় অফিস ফেরত বাড়ি না গিয়ে যা হোক একটা কিছু বলে বাড়িটা দেখতে চলে এসেছি। আর তাছাড়া, বিতানকে যতটা চিনি, এসব পর্দা, পাপোষ, বিছানার চাদর টাইপের দৈনন্দিন জিনিসপত্র কিনতে গিয়েও ছড়িয়ে লাট করবে, তাই আসতে আমাকে হতই।
ঢোকার সাথে সাথে বিতান বলে - "ওসব চাদর-টাদর ছাড়, আগে তো চা বানানোর একটা ব্যবস্থা করা দরকার।" তা তো ঠিকই! তা সেই চক্করেই স্টোভ, চা-পাতা, চিনি, দুধ কিনতে বেরিয়েছিলাম। তারপর যা হয় আর কি, পাড়ার মোড়ে একটা চায়ের দোকানের মাসিকে ঘুম থেকে তুলে দোকানের ঝাঁপ খুলিয়ে হাতে চায়ের ভাঁড় নিয়ে কথা বলতে বলতে নিরুদ্দেশ যাত্রার মত হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যে এসে পড়েছি আর ক'টা যে বেজে গেছে, খেয়ালই করিনি। আর বৃষ্টি হলেও হতে পারে ভেবে ছাতা নিয়ে বেরোনোর মতো প্র্যাক্টিকাল সেন্স, বলাই বাহুল্য, আমার বা বিতানের কারোরই নেই।
বৃষ্টিটা নামবো নামবো করছে অনেকক্ষন ধরেই।
- "আচ্ছা শোন টুয়া, আমরা যে রাস্তা হারিয়েছি যে সেটা বুঝতে পারছিস তো?"
- "তোর বাড়ি, তুই চিনবি না?"
- "আমার বাড়ি হবে, এখনও হয়নি গাধা! সবে তো সকালে চাবি পেলাম। আমাকে দোষ না দিয়ে এখন কি করব তাই ভাব।"
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে হেসে ফেলতেই বৃষ্টির প্রথম ফোঁটাটা পড়ল, বিতানের চশমার ডানদিকের কাঁচে। দ্বিতীয়টা, আমার কব্জিতে। কব্জিটা তুলে নাকের কাছে এনে জোরে নিঃশ্বাস নিলাম একবার।
- "দেখ বিতান, সিজনের প্রথম বৃষ্টির কিন্তু একটা আলাদা গন্ধ থাকে। খুব ফ্রেস। লেবু পাতার মতো।"
- "তুই আর বড় হবি না কোনোদিন, টুয়া!"
কুড়ি বছর ধরে কম করে কুড়ি হাজারবার রিপিট করা ডায়ালগটা আরো একবার রিপিট করল বিতান। কেন যে ছাই বলতে যাই, কে জানে!
রাগ করে তেড়েফুঁড়ে একটা জবাব দিতে যাবো, তখনি লিটারেলি আমার রাগটা জল করে দিয়ে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টিটা ঝেঁপে নামলো। অঝোরে।
মুখটা আকাশের দিকে তুলে চোখ বন্ধ করে আরেকবার জোরে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে দুটো জিনিশ একসাথে টের পেলাম। এক, কাছাকাছি কোথাও একটা কদম গাছ আছে; এবং দুই, আশেপাশে কোন বাড়িতে জমিয়ে রগরগে করে মাটন রান্না হচ্ছে। দুটো এইর'ম বিপরীতধর্মী অথচ প্রানাধিক প্রিয় টাইপের গন্ধে ভিজে একাকার হতে হতে হঠাৎ এবারে চেতনা ফিরল।
- "বিতান, তুই সত্যিই বাড়ি ফেরার রাস্তা চিনতে পারবি না?"
- "না। বললাম তো!"
- "মানে?"
- "মানে, আমরা হারিয়ে গেছি। কিচ্ছু করার নেই।"
- "অদ্ভুত কথা! এখন উপায়?"
- "জানিনা। বোর করিস না, ভিজতে দে। কতদিন পর বৃষ্টিতে ভিজছি বলত?"
তা তো বটেই!
ভিজলাম, খুব। সেই কুড়ি বছর আগের মতো করে। আকাশের দিকে মুখ করে, দু' আঁজলায় ভর্তি করে জল ধারণ করে; মাথায়, চুলে এদিক-ওদিক থেকে উড়ে আসা খড়কুটো, ভিজে পাতা, ফুলের ছেঁড়া পাপড়ি বন্দি করে নিয়ে।
তারপর?
তারপর ভিজে একশা হয়ে চপচপে জামাকাপড়ে এ- পাড়া সে পাড়া ঘুরে মিষ্টির দোকান, চায়ের স্টল, রিকশাওয়ালাদের যৌথ সাহায্যে কোনোমতে বাড়ি ফিরলাম সেদিন।
xxxxxxxxxxxxxxxxxxx
বাড়িটা আমরা সেদিন খুঁজে পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু সেই হঠাৎ হারিয়ে যাওয়াটা আমি পরে আর কোনদিনই খুঁজে পাইনি।
তুই পেয়েছিস, বিতান?
khub valo narration, tan tan pathok ke dhore rakhbe. Aaro likhun ekhon apnar jowar kintu.
ReplyDeleteOnek, onek dhonyobad, Pradipbabu.
ReplyDeletebhari bhalo ... monta bhalo lagay bhore gaelo .... r ektu hingshe o holo ... tuar moton hariye jete ebong hariye thakte cheyechhi onekbar, parini ... khujte hoyechhe ferbar rasta ... tai ei lekhata pore koyek miniter jonye abar hariye jete darun laglo ... thanku, hariye jete shahajyo korar jonye :)
ReplyDeleteOnek, onek dhonyobad, Anuradha. :)
ReplyDeleteWas searching for a statement for quite some time to respond to this post. Found one from Charlie Chaplin's Heart Touching statements (And today is his 125th b'day)
ReplyDeleteI like walking in the rain,
because nobody can see my tears.
Thanks. Rains have generally been good to me, I haven't had to hide tears in them.
DeleteBrishti te dnariye bheja best na boshe bheja? Ektu input deben.
ReplyDelete