আইডিয়াটা আমার মায়ের ছিল। ধপাসের প্রথম জন্মদিন। দিনটা আসার মাস তিনেক আগে থেকেই কি-দেব কি-দেব আলোচনায় সকাল বিকেল এয়ারটেলের এস-টি-ডি কল রমরমা বাজার করে নিচ্ছে, কিন্তু ফয়সালা আর কিছুতেই হচ্ছে না।
- জামা?
- তাহলে একটা আলমারিও দিও!
- খেলনা?
- দেখনি, ওর স্টক?
- সোনার জিনিস?
- ওসব নিজের কাছে রাখো, আমাকে বা আমার মেয়েকে দিতে আসবেনা। (গর্জন)
- তাহলে?
- দাঁড়াও, ভাবি।
এই লুপটা মোটামুটি বহুদিন ধরে চলছিল।
তারপর সেই ইউরেকা মোমেন্ট! সাতসকালে ফোন।
- টুয়া, আমি ঠিক করে ফেলেছি। ওকে একটা অ্যাকোয়েরিয়াম দিলে কেমন হয়? একা একা থাকে, বেশ সময় কাটবে।
- আহ... উম... নট ব্যাড। নট ব্যাড অ্যাট অল!
অতঃপর জন্মদিনের আগের সপ্তাহে বাবা-মায়ের আগমন, এবং পেট-শপ পরিদর্শন।
আমার মায়ের আজীবনের স্বভাব যের'ম, মাছ বললাম মানে কি শুধুই মাছ, তা কখনও হয়! বাবা, বাবার আজীবনের স্বভাব যের'ম , নির্বাক দর্শক। অনির্বাণও তথৈবচ।
সুতরাং আমার "কি কর! কি কর!" গোছের আপত্তিকে বিন্দুমাত্র আমল না দিয়ে ই-য়া-বড় সাইজের একটা অ্যাকোয়েরিয়ামের পাশাপাশি অনির্বাণের মধ্যমা এবং তর্জনীতে ঝুলতে ঝুলতে পিঙ্ক আর সবুজ কম্বিনেশানের রেক্ট্যাঙ্গুলার একটা খাঁচায় করে নীলরঙা দুষ্টু এবং দুধশাদারঙা মিষ্টুর আমাদের বাড়িতে আগমন ও রাজ্যপাট স্থাপন। এবং নামকরণ। দোকানদার বলেছে নীলটা ছেলে আর শাদাটা মেয়ে, সুতরাং।
মুখে না-না বললেও পাখির শখ যে আমার একদম ছিল না, তাও নয়। ইন ফ্যাক্ট, এই ঘটনার ক'দিন পরেই আরেক পরিচিতর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তাদের ড্রয়িং রুমের ২০% জুড়ে ইয়া সাইজের খাঁচায় নানান রঙের, বয়েসের, চেহারার এবং ভাষাভাষীর প্রচুর প্রচুর পাখি। আলোচনায় বেরোল, কিনেছিল মাত্র ক'টা, বাকিটা নেহাতই জৈবিক প্রবৃত্তির সুফল।
শুনে তো আশায় আমাদের চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ওদের থেকে যতটা সম্ভব টিপস অ্যান্ড টেকনিক্স জেনে এসে বাড়ি ফিরে জোরকদমে লেগে পড়লাম। প্রথমেই ওদেরকে যতটা সম্ভব প্রাইভেসি দিতে ওদের ঘরটা আলাদা করে দিলাম। স্টাডিতে সারাদিন বাড়ির অন্য কারোর ঢোকা বারণ, শুধু মাসি মাঝে মাঝে খাবার আর জল দিতে ঢুকবে। খাঁচাটা সরিয়ে প্লেস করে দেওয়া হল কাঁচের দরজা ঘেঁষে, যাতে চোদ্দতলা থেকে নীল আকাশ দেখতে দেখতে নিজেদের জন্ম-অধিকার যতটা পারে পুরিয়ে নিতে পারে। গরমকালে পাখা, মায় শীতকালে হাল্কা হিটারের ব্যবস্থাও হল। দুটো সুন্দর দেখে হাঁড়ি কিনে আনা হল, গায়ে ডিজাইন করা দরজা। একটায় মাটি দেওয়া হল, অন্যটায় দুগ্ধ সফেন তুলো। মানে, আরদি লুক চাও না ফাইভ স্টার, দুইই আছে। শুধু, করো বস, করে ধন্য করো!
দু'মাস, ছ'মাস করে বছর ঘুরে গেল, কিন্তু দুষ্টু - মিষ্টুর যুগল সংসারে কোন তৃতীয় প্রাণী, মানে পক্ষি, নিদেনপক্ষে ডিমও এলনা।
আবার ধপাসের জন্মদিন এলো। আবার কি-দেব-কি-দেব এলো। অনেক আশায় - নিরাশায় আরেকটা চারগুণ সাইজের খাঁচায় করে আরও দুটো সদস্য এলো। এদের নাম রাখা হল, হাম্পটি-ডাম্পটি। কি জানি, আগের জোড়টির হয়ত পাতি বাঙালি নাম পছন্দ হয়নি, এবারে একটু ওদেশী কায়দায় দেখা যাক!
অবশ্যই, দোকানদারকে পই-পই করে জিজ্ঞেস করা হল - দাদা, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে তো?
- হ্যাঁ দিদি, এই তো দেখুন না, সবুজটা ছেলে আর হলুদটা মেয়ে। বাচ্চা না হলে... (বড় বড় ডায়ালগ, যেমন বলে থাকে আরকি!)
আবার নতুন উদ্যোগে ফ্যামিলি প্ল্যানিং শুরু হল। তুলো, মাটি, হাঁড়ি, কলসি, প্রাইভেসি, খোলা হাওয়া, হিল স্টেশানের ঠাণ্ডা, মরুভূমির গরম, কলকাতা-সুলভ হিউমিডিটি, লাস্ট-এ স্রেফ সফট-লাইট অ্যান্ড ইন্সট্রুমেন্টালটুকুই বোধ হয় বাকি রেখেছিলাম। কিন্তু, কোথায় কি? তেনারা দিব্যি খাচ্চেন-দাচ্ছেন, খাঁচা নোংরা করছেন, জলের পাত্র দিনে দশবার করে উল্টাচ্ছেন, আর কিচিরমিচির বানীতে সারাবাড়ি সরগরম করে রাখছেন। কিন্তু ডিম, বাচ্চা? হা হতোস্মি!
এই চলল আরও ঝাড়া একবছর। মাঝখানে ঘটনা বলতে ডাম্পটি, অর্থাৎ হলুদটা, উড়ে পালাল। আমার ভাই স্কাইপে সেটা শুনে যারপরনাই খুশি হল, ওর মতে পাখি পোষা ব্যাপারটাই খুব ইনহিউমান!
আমরা যখন অলমোস্ট ব্যাপারটা মেনেই নিয়েছি, যে আমাদের বাড়িতে পাখিদের সেক্সলাইফ ব্যাপারটা জাস্ট জমছে না, বোধ হয় গ্রহ-নক্ষত্র বা বাস্তুশাস্ত্র গোছের কোন ব্যাপার, তখনই সেই দ্বিতীয় ইউরেকা মোমেন্ট!
কলকাতা ট্রিপে মাসি নিজের বাড়ি গেছিল, সেখান থেকে শিখে এলো ছেলে-পাখি মেয়ে-পাখি আইডেনন্টিফাই করতে পারা। সারা ট্রেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বাড়ি ঢুকেই সোজা খাঁচার কাছে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ফাইনালি মাসি কনক্লিউড করল, আমাদের সব ক'টা পাখিই ছেলে! দোকানদার মিথ্যে বলেছিল, বা নিজেই চেনে না।
এর পরের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত এবং উজ্জ্বল। অন্য একটা পেট-শপ গমন এবং তিন-তিনখানা মহিলা-পাখি নির্বাচন (পলিগ্যামি, ছিঃ!) এবং নয়া উদ্যোগে এবং আশায় অধীর অপেক্ষা।
হপ্তা দুয়েকের মধ্যেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!
ইয়ে...... ইয়ে..... (প্লিজ রিড অ্যাজ YAY! YAY!!...) ফুটফুটে শাদা দু-দুখানা ডিম হ্যাভ বিন হ্যাচড!!
সোনা, মা আমার, এবারে মান রাখিস। প্লিজ!
- জামা?
- তাহলে একটা আলমারিও দিও!
- খেলনা?
- দেখনি, ওর স্টক?
- সোনার জিনিস?
- ওসব নিজের কাছে রাখো, আমাকে বা আমার মেয়েকে দিতে আসবেনা। (গর্জন)
- তাহলে?
- দাঁড়াও, ভাবি।
এই লুপটা মোটামুটি বহুদিন ধরে চলছিল।
তারপর সেই ইউরেকা মোমেন্ট! সাতসকালে ফোন।
- টুয়া, আমি ঠিক করে ফেলেছি। ওকে একটা অ্যাকোয়েরিয়াম দিলে কেমন হয়? একা একা থাকে, বেশ সময় কাটবে।
- আহ... উম... নট ব্যাড। নট ব্যাড অ্যাট অল!
অতঃপর জন্মদিনের আগের সপ্তাহে বাবা-মায়ের আগমন, এবং পেট-শপ পরিদর্শন।
আমার মায়ের আজীবনের স্বভাব যের'ম, মাছ বললাম মানে কি শুধুই মাছ, তা কখনও হয়! বাবা, বাবার আজীবনের স্বভাব যের'ম , নির্বাক দর্শক। অনির্বাণও তথৈবচ।
সুতরাং আমার "কি কর! কি কর!" গোছের আপত্তিকে বিন্দুমাত্র আমল না দিয়ে ই-য়া-বড় সাইজের একটা অ্যাকোয়েরিয়ামের পাশাপাশি অনির্বাণের মধ্যমা এবং তর্জনীতে ঝুলতে ঝুলতে পিঙ্ক আর সবুজ কম্বিনেশানের রেক্ট্যাঙ্গুলার একটা খাঁচায় করে নীলরঙা দুষ্টু এবং দুধশাদারঙা মিষ্টুর আমাদের বাড়িতে আগমন ও রাজ্যপাট স্থাপন। এবং নামকরণ। দোকানদার বলেছে নীলটা ছেলে আর শাদাটা মেয়ে, সুতরাং।
মুখে না-না বললেও পাখির শখ যে আমার একদম ছিল না, তাও নয়। ইন ফ্যাক্ট, এই ঘটনার ক'দিন পরেই আরেক পরিচিতর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তাদের ড্রয়িং রুমের ২০% জুড়ে ইয়া সাইজের খাঁচায় নানান রঙের, বয়েসের, চেহারার এবং ভাষাভাষীর প্রচুর প্রচুর পাখি। আলোচনায় বেরোল, কিনেছিল মাত্র ক'টা, বাকিটা নেহাতই জৈবিক প্রবৃত্তির সুফল।
শুনে তো আশায় আমাদের চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ওদের থেকে যতটা সম্ভব টিপস অ্যান্ড টেকনিক্স জেনে এসে বাড়ি ফিরে জোরকদমে লেগে পড়লাম। প্রথমেই ওদেরকে যতটা সম্ভব প্রাইভেসি দিতে ওদের ঘরটা আলাদা করে দিলাম। স্টাডিতে সারাদিন বাড়ির অন্য কারোর ঢোকা বারণ, শুধু মাসি মাঝে মাঝে খাবার আর জল দিতে ঢুকবে। খাঁচাটা সরিয়ে প্লেস করে দেওয়া হল কাঁচের দরজা ঘেঁষে, যাতে চোদ্দতলা থেকে নীল আকাশ দেখতে দেখতে নিজেদের জন্ম-অধিকার যতটা পারে পুরিয়ে নিতে পারে। গরমকালে পাখা, মায় শীতকালে হাল্কা হিটারের ব্যবস্থাও হল। দুটো সুন্দর দেখে হাঁড়ি কিনে আনা হল, গায়ে ডিজাইন করা দরজা। একটায় মাটি দেওয়া হল, অন্যটায় দুগ্ধ সফেন তুলো। মানে, আরদি লুক চাও না ফাইভ স্টার, দুইই আছে। শুধু, করো বস, করে ধন্য করো!
দু'মাস, ছ'মাস করে বছর ঘুরে গেল, কিন্তু দুষ্টু - মিষ্টুর যুগল সংসারে কোন তৃতীয় প্রাণী, মানে পক্ষি, নিদেনপক্ষে ডিমও এলনা।
আবার ধপাসের জন্মদিন এলো। আবার কি-দেব-কি-দেব এলো। অনেক আশায় - নিরাশায় আরেকটা চারগুণ সাইজের খাঁচায় করে আরও দুটো সদস্য এলো। এদের নাম রাখা হল, হাম্পটি-ডাম্পটি। কি জানি, আগের জোড়টির হয়ত পাতি বাঙালি নাম পছন্দ হয়নি, এবারে একটু ওদেশী কায়দায় দেখা যাক!
অবশ্যই, দোকানদারকে পই-পই করে জিজ্ঞেস করা হল - দাদা, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে তো?
- হ্যাঁ দিদি, এই তো দেখুন না, সবুজটা ছেলে আর হলুদটা মেয়ে। বাচ্চা না হলে... (বড় বড় ডায়ালগ, যেমন বলে থাকে আরকি!)
আবার নতুন উদ্যোগে ফ্যামিলি প্ল্যানিং শুরু হল। তুলো, মাটি, হাঁড়ি, কলসি, প্রাইভেসি, খোলা হাওয়া, হিল স্টেশানের ঠাণ্ডা, মরুভূমির গরম, কলকাতা-সুলভ হিউমিডিটি, লাস্ট-এ স্রেফ সফট-লাইট অ্যান্ড ইন্সট্রুমেন্টালটুকুই বোধ হয় বাকি রেখেছিলাম। কিন্তু, কোথায় কি? তেনারা দিব্যি খাচ্চেন-দাচ্ছেন, খাঁচা নোংরা করছেন, জলের পাত্র দিনে দশবার করে উল্টাচ্ছেন, আর কিচিরমিচির বানীতে সারাবাড়ি সরগরম করে রাখছেন। কিন্তু ডিম, বাচ্চা? হা হতোস্মি!
এই চলল আরও ঝাড়া একবছর। মাঝখানে ঘটনা বলতে ডাম্পটি, অর্থাৎ হলুদটা, উড়ে পালাল। আমার ভাই স্কাইপে সেটা শুনে যারপরনাই খুশি হল, ওর মতে পাখি পোষা ব্যাপারটাই খুব ইনহিউমান!
আমরা যখন অলমোস্ট ব্যাপারটা মেনেই নিয়েছি, যে আমাদের বাড়িতে পাখিদের সেক্সলাইফ ব্যাপারটা জাস্ট জমছে না, বোধ হয় গ্রহ-নক্ষত্র বা বাস্তুশাস্ত্র গোছের কোন ব্যাপার, তখনই সেই দ্বিতীয় ইউরেকা মোমেন্ট!
কলকাতা ট্রিপে মাসি নিজের বাড়ি গেছিল, সেখান থেকে শিখে এলো ছেলে-পাখি মেয়ে-পাখি আইডেনন্টিফাই করতে পারা। সারা ট্রেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বাড়ি ঢুকেই সোজা খাঁচার কাছে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ফাইনালি মাসি কনক্লিউড করল, আমাদের সব ক'টা পাখিই ছেলে! দোকানদার মিথ্যে বলেছিল, বা নিজেই চেনে না।
এর পরের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত এবং উজ্জ্বল। অন্য একটা পেট-শপ গমন এবং তিন-তিনখানা মহিলা-পাখি নির্বাচন (পলিগ্যামি, ছিঃ!) এবং নয়া উদ্যোগে এবং আশায় অধীর অপেক্ষা।
হপ্তা দুয়েকের মধ্যেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!
ইয়ে...... ইয়ে..... (প্লিজ রিড অ্যাজ YAY! YAY!!...) ফুটফুটে শাদা দু-দুখানা ডিম হ্যাভ বিন হ্যাচড!!
সোনা, মা আমার, এবারে মান রাখিস। প্লিজ!
khub bhalo laglo pore...
ReplyDeleteThank you!! :)
Delete