Tuesday, 15 April 2014

মজন্তালি সরকার aka John!

জন আমাদের হিরো ছিল।

জনের ব্যাপার সাপারই আলাদা ছিলো। জন কাউকে ভয় পেতনা, গ্রাহ্যও করত না বিশেষ। ওর হাঁটাচলার ভঙ্গিই ছিল সবার থেকে আলাদা। মানে, ওর চলার রাস্তায় ধরুন যদি কেউ এসে পড়ে, রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়ানোর দায়টা অবশ্যই তার; জন বড়জোর দেরি দেখলে ঘাড় তুলে একটা শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অসন্তোষ প্রকাশ করবে মাত্র।



জনের জীবনে তাড়াহুড়ো, টেনশন, ইন্সিকিউরিটি, এসবের কন্সেপ্ট একেবারেই ছিল না। ওর হাবভাব, চলার গতি, তাকানো ধরন, বসার পোজ, সবই ছিল সুস্থির, আত্মবিশ্বাসী। ও ঘরে ঢুকে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বুঝে নিত এবং বুঝিয়ে দিত - "এই আমি এলাম, এবারে সবার অ্যাটেন্সন যেন আমার দিকেই থাকে।" হতও তাই। আলোচনার বিষয়বস্তু যতই গভীর বা সঙ্গিন হোক না কেন, মুহূর্তেই সেটা গতিপথ পালটিয়ে "জানিস তো, জন কি করেছে..."তে রাস্তা নিত। জন খুবই গম্ভীর মুখে আগ্রহভরে অথচ আপাত নির্লিপ্ত মুখে গল্পগুলো শুনতো, এবং স্থানে স্থানে  সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ত।

বসার ঘরে এবং খাওয়ার টেবিলে জনের নির্দিষ্ট সীট ছিল। অন্য কারোর, তা সে যতই তাবড় গেস্ট হোক না কেন, তাদের অধিকার ছিলনা সেই সীট দখল করে। শোনা যায়, একবার সম্বন্ধ দেখতে এসেছে কোন পাত্রপক্ষ, মেয়ে তাঁদের সামনে মাথা নিচু করে লাজুক মুখ করে বসে, মেয়ের বাবা বিনয়ের সাথে প্লেটের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে "আরেকটু খান, আরেকটু খান" করছেন, এমত সময় ঘাড়ের রোঁয়া ফুলিয়ে জন ঢুকল। ঢুকে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে ব্যাপারস্যাপার বুঝে নিয়ে আমার রাঙ্গাপিসির দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকাল - অর্থাৎ, "এরা কারা? এদের এতো ধৃষ্টতা কি করে হয়, এরা কি জানেনা আমি কে?" আমার রাঙ্গাপিসিও অমনি "দাদা কিছু মনে করবেন না, যদি একটু এদিকে সরে এসে বসেন। ওটা না আসলে আমাদের জনের জায়গা" বলে ছেলের বাবাকে সোফা ছাড়া করে ছাড়ল। জন একটা হালকা গরর স্বরে রাঙ্গাপিসিকে "থ্যাঙ্ক ইউ" বলে বীরবিক্রমে হেলেদুলে গিয়ে সোফার সাইডে আঁচড়ে ভর দিয়ে উঠে আয়েশ করে কুশনে হেলান দিয়ে বসলো। মানে, এটাই তো স্বাভাবিক, এরমটাই তো হওয়ার কথা!

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। জন আমার রাঙ্গাপিসির পোষা একান্ত আদরের হুলো বেড়াল।

না না, বাড়ির ছেলের মতো একদম বলবেন না। বাড়ির ছেলেকে বকা যায়, খুব ত্যাঁদড়ামি করলে দু'ঘা লাগানোও যায়। জনের সাথে এসব হিসেব চলে না। জন বাড়ির হর্তা কর্তা। ইন ফ্যাক্ট, বিধাতা বললেও খুব বাড়াবাড়ি হবে না বোধ হয়!

মাছের বাজার থেকে ফিরে সবচেয়ে বড় পীসগুলো আগের থেকে বেছে তুলে রাখা হয় জনের জন্য। গাড়ি করে কোথাও ঘুরতে গেলে জানলার সীটটা জনের জন্য বাঁধা। জন বাড়িতে বোর হলে আমার পিসতুতো ভাইয়ের সোমবার অঙ্ক পরীক্ষা থাকলেওও শনিবার ভিক্টোরিয়া বেড়াতে যেতে হয়। ইত্যাদি ইত্যাদি।

জন ঘুমোত মশারীর চালে, আর বাকি সময়ে শোকেসে বসে কাটুন বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে ছবি দেখতো।

আরেকটা ব্যাপার - জন বেড়াল হতে পারে, কিন্তু ছুঁচো (বা  ইঁদুর) মেরে হাত গন্ধ করার মতো নীচ কাজ সে জীবনেও করেনি।

জনের গল্প সহজে শেষ হবেনা। ওর চলে যাওয়া নিয়ে কথা বলতে মন সরছে না। সত্যি বলতে কি, এখনও মনে হয় ও নিশ্চয়ই আছে ওই বাড়িতে, হয়ত অন্য কোন ঘরে।

যাই হোক! বরং আরেকটা গল্প দিয়ে শেষ করি।

বিয়ের পর জামাইরূপী অনির্বাণ প্রথমবার রাঙ্গাপিসির বাড়ি গেছে। ওই বাড়িতে গিয়ে, ওই সোফায় বসে জনের গল্প ছাড়া অন্য কিছু ভাবা বা বলা নেহাতই অসম্ভব! চারিদিক থেকে কাড়াকাড়ি করে আমার মা, বাবা, রাঙ্গাপিসির, পিসেমশাই আর আমি জনের নানান কীর্তিকলাপের গল্প করছি অনির্বাণকে, আর ও নতুন-জামাইসুলভ বিনয়ের সাথে ধৈর্য ধরে শুনছে আর মাথা নাড়ছে। তারপর ফাঁক পেয়ে গলা নামিয়ে আমার কানের কাছে মুখ এনে মৃদু  কৌতূহল - আচ্ছা, জনের নামের সাথে মিলিয়েই কি তোদের সব কাজিন ভাইবোনদের নাম রাখা হয়েছে - দীপাঞ্জন, সৃজন, ত্রিনাঞ্জন, তপাঞ্জন, এমনকি শিঞ্জিনীও?

7 comments:

  1. Srijan Sengupta15 April 2014 at 22:19

    Majantali Sarkar-i bote. Ghumoto abar mosharir upor.

    ReplyDelete
  2. জন, জনি, জনার্দন... তারা-রাম পাম-পাম-পাম-পাম! তার কি কোন ছবি পাওয়া যায় না?

    ReplyDelete
    Replies
    1. '99 e mara gechhe, tai soft copy chhobi to nirghat nei, kolkata gele purono photor album ekbar khujbo bhabchhi. :)

      Delete
  3. 'জন-জামাই-ভাগ্না' কে কেন যেন এক bracket এ রাখা হয়! :P ..... জানতাম্। কিন্তু এই জন ই যে সেই 'জন', জানতাম্ না। নাহ্! হিঁদুর ঘরে মরণোত্তর সমালোচনা নিষিদ্ধ, অনির্বানের হয়েও দুটি কথা বলার ছিলো .. :-D

    ReplyDelete
    Replies
    1. Hehe, bolun, bolun! Anirbaner hoe kotha bolar loker emnii khub obhab.. :D

      Delete
    2. হা-হা! তার যে খুব সাহায্যের প্রয়োজন, তাও মনে হয় না। যুগলবন্দী ভালোই রপ্ত আছে। বেশ্ বেশ্ :-D

      Delete

Did you like it? Did you not? Please leave a comment...