একটা পরিবারে ধরা যাক বাবা, মা এবং বাচ্চা তিনজনেরই জ্বর হয়েছে। পরিবারটি মোটামুটি স্বচ্ছল, কাজের মাসি পিসি সবই আছে। আজকাল এমনিতেও আর আলাদা করে বাজার করার দরকার পড়ে না, মোবাইলে দু চারটে বোতাম টিপে দিলেই স্যাট করে বাড়ির দরজায় তরিতরকারি মায় মাছের ঝোল বা রেশমি কাবাব সবই পৌঁছে যায় ঘন্টা খানেকের মধ্যেই। অসুখ করলে ডাক্তার দেখানো হয়, ওষুধও পড়ে নিয়মিত। তা, এ হেন একটা পরিস্থিতিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই কি দেখা যাবে? দেখা যাবে যে, তিনজনেই শুয়ে বসে কাতরাচ্ছে, জ্বরে যেমন হয় আর কি। আর তারপর বাবাটিকে অনতিবিলম্বেই দেখা যাবে খেয়ে বা মুখের বিস্বাদে না খেয়েই শয্যা নিল। মায়ের অবস্থাও কিন্তু তথৈবচ, অন্তত থারমমিটারের নিরিখে। কিন্তু সে মহিলা ঘুমাতে গেলে অনেক খরচা আছে। এক, রান্নার মাসি আসবে, তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে দু বেলার মেনু। দুই, বাচ্চাটার ওষুধ পড়েছে তো? তিন, বাচ্চাটা না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল, ইস! তোল, তুলে খাওয়াও কিছু একটা। স্যুপ খাবি, সোনা? আচ্ছা একটা কলা অন্তত খা। ঠিক আছে মা, বিকেলে চিপ্স কিনে দেব, প্রমিস। রাতভোর কাশি , উঠে উঠে গায়ের চাদরটা টেনে টুনে দেওয়া। ভোর চারটে নাগাদ আরেকবার টেম্পারেচারটা দেখে নেওয়া… নাহ, আরেক ডোজ আইবুজেসিকটা দিয়ে দেওয়াই সেফ হবে।
খালি পেটে ওষুধ খায় না
সোনা, প্লিজ একটু কিছু মুখে দাও! বাচ্চা নিজে খেতে পারেনা – আহা, জ্বরের মুখে একটু
আহ্লাদি তো করবেই। খাইয়ে দাও, মা। সোনা, গরম
গরম খেয়ে নে, নাহলে কাশি টা কমবে না। কিন্তু ডোরেমন বিনে চিকেন স্টূতে স্বাদ কই? অতএব
“হাঙ্গামা” চ্যানেল। তাতেও জো কই? মা, একটা গল্প বলো না? মায়ের মাথা ফেটে পড়তেই পারে অসহ্য যন্ত্রনায়, কিন্তু
আমারা সবাই জানি সত্যি তো আর মাথা ফেটে পরবে না।
কিন্তু কথা হল, সত্যি
মাথা ফেটে পড়বে না কিন্তু বাবারও। প্রশ্ন হল, সেটা কি আমরা জানি?
বাবাদের আহা আর বাচ্চাদের
আহা-র ভিড়ে স্যুপার-উওম্যান মা-গুলোর জন্য বড় কষ্ট হয় মাঝেমাঝে। সবই আছে, কিসের অভাব
আর! বর পেটায় না, শাশুড়ির গঞ্জনা সইতে হয়না, মুখে কেউ অ্যাসিড ছুড়ে মারছে না। বরং কেতা
দেখো… যা খুশি করে, যেমন খুশি সাজে, যখন তখন গাড়ি চড়ে…
কিন্তু তাও, কি করব বলুন,
কষ্ট হয়। কষ্ট টা জ্বরের জন্য না, বিশ্বাস করুন। জ্বর তো হবেই, আজ নয় কাল। আমার কষ্ট
হয় এটা ভেবে যে, তফাত দেখতে দেখতে চোখ এতটাই সয়ে গেছে যে এখন আর চেষ্টা করলেও কেউ তফাতটা
দেখতে পায়না। কি করব বলুন, আমি না… লজ্জার মাথা খেয়ে, তফাতটা এখনও দেখতে পাই চোখে।
আসলে, ফেমিনিস্টরা বোধ হয় এরকমই একপেশে একচোখো হয়!
No comments:
Post a Comment
Did you like it? Did you not? Please leave a comment...