কোম্পানির নাম - Bring
My Flowers। শুনতে কিরকম জানি
একটা, প্রথমে ভেবেছিলাম। “বেয়ারা, চালাও ফোয়ারা!” গোছের, উদ্ধত। আহা, ফুলের দোকান যখন
ফুলকুমারী নাম রাখলেই পারে!
বাড়ি বয়ে
ফুল দিয়ে যায় ওরা, প্রতি সপ্তাহে। সই করে দি, বুঝিয়া-পাইলাম এই মর্মে।
তবে ফুলগুলো
খুব একটা আমার বুঝিয়া পাইবার ধার ধারে না। সোজা চাবুকের মতন চেহারা, ইয়া লম্বা লম্বা
ডাঁটি, গরবিনী রাজহংসীর মতন গ্রীবা। রোজ তলা থেকে দু আঙুল ডাঁটি কেটে দিতে হয়, আর জল
বদলে দিতে হয় নিয়ম করে। ভুলে গেলেই অভিমান, মুখ কালো হয়ে যায় সবার। সপ্তাহে একদিন করে
ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে ফুলদানি, ওরা নির্দেশ দিয়ে গেছে। ফুলদানি? গোল কাঁচের ঘর ওদের, সান-রুফ সমেত। ফুলদানির
খোলা আকাশ দিয়ে কৌতূহলী মুখ বাড়িয়ে থাকে ফুলগুলো, আমার দিকে চেয়ে থাকে অবাধ বিস্ময়ে।
ওদের নতুন মালিক, নাকি? অত সহজ, ফুলের মালিক হওয়া? ফুলের মালিক কেউ হয় নাকি, কোনদিন?
হলে হওয়া যায় বড়জোর মালি! তাই অপটু মালির মতন আমি ওদের জল দিয়
গ্লাস ভরে, নতুন অতিথির মত করে। ওরা হাসে। হাসতে হাসতে ঢলে পড়ে এর ওর গায়ে। আমি ওদের
বাড়তে দেখি, কমতে দেখি। প্রতিদিন।
রোজ দু আঙুল করে ছেঁটে দিলে ওরা নাকি নতুনের মতন থাকবে। হয় নাকি... সময়কে ধরে রাখা যায়, ছুরির ফলায়? তবু, থেকে যায়। রেখে দেয় ধরে, প্রাণ। আর তারপর যখন পরের দফায় আসে আরেকদল বন্ধু, তখন নতুন আর পুরনো দল মিলে বাসা বাধে, ভাগ করে নেয় কাঁচের প্রাসাদ। বড়রা ছোটদেরকে আড়াল করে রাখে, ছাদ হয়ে দাঁড়ায় ওদের মাথায়। ছোটরা বয়সের ভারে ভোর দেয় দানির দেওয়ালে। শব্দ নেই কোন, তাও, কান পাতলে যেন শোনা গেলেও যেতে পারে ওদের নিঃশব্দটার নিঃশ্বাস।
নাহ, ভুল
বললাম; শোনা যাবেনা কিছুতেই। ওদের নিঃশব্দটা একান্তই মনুষ্যত্তর।
আজ সকালে
কয়েকটা ফুল শুকিয়ে গেলো অবশেষে। ধরে রাখার চেষ্টা করছিলাম জলের ছিটে মেরে, কেন জানিনা।
শেষমেশ তুলেই ফেললাম, ওদের। পরিণতি বলে বিশেষভাবে মৃত্যুবিষয়ক দুঃখ পাবার যে কিছু নেই,
এই সারমর্মটা বুঝতে বোধ হয় সকলেরই খানিকটা সময় লাগে, আমারও লাগলো। তারপর মন খারাপ ঝেড়ে
ফেলে হাত ভর্তি করে ওদেরকে নিয়ে গেলাম, নতুন প্রকারের এক বন্ধুত্বের সন্ধানে।
এই বন্ধুত্বের সন্ধান আমিও কি জানি ছাই! তাও…
এই বন্ধুত্বের সন্ধান আমিও কি জানি ছাই! তাও…
আমার খরগোশদুটো বেশ অবাক হল ওদেরকে দেখে, আগে দেখেনি। খানিক নেড়েচেড়ে দেখল হাত দিয়ে, তারপর দাঁত
বসাল। আমি সরে গেলাম না, দাঁড়িয়েই রইলাম। দেখতে চাইলাম, পুরোটা। খেয়ে ফেলাটা ক্রূরতা,
নির্মম, কে বলল – জিজ্ঞেস করলাম নিজেকেই, পুরনো ধারণা আর নতুন চেতনার সংযোগে দাঁড়িয়ে।
ফুলরা কি বলেছে আমাকে, ওদের খেয়ে ফেললে ওদের ব্যথা লাগে? ব্যথা বোঝে ওরা? ওরা কি আলাদা
করে বেঁচে থাকে, গাছের ডালের থেকে দূরে? আমরা কি আদৌ জানি, শুকিয়ে যেতে ওদের বেশি ব্যথা
লাগে নাকি পড়ে যেতে, অথবা যদি খিদে মেটায় অন্য কোন প্রাণীর? ফুল দিয়ে খিদে মেটানো কি
গাজর, পালং শাকের চেয়ে বেশি বেসুরো? কোন ধারণা যে ঠিক কোথা থেকে বীজ বোনে আমাদের ভিতর,
ভাবি মাঝে মাঝে। এই ফুলগুলো… দুদিন আগে বীজ ছিল, তারপর ডাঁটি। একদিন কুঁড়ি ধরল গাছে,
তারপর মেলে ধরল পাপড়ি। প্রজাপতি এলো হয়ত বা। বা সোজা, গাছ থেলে পার্সেল সেজে পসরা সাজল ওরা। দোকান থেকে
ঘর, সুতোর বাঁধন খুলে কাঁচের দেওয়াল… এই প্রতিটা ধাপ কি উত্থান, নাকি পতন? এক পা এক
পা করে মৃত্যু, নাকি জীবন যৌবন? আমরা কি আদৌ জানি - ওদের গল্প, ভিতরের কথা? কুঁড়ির
মায়া কাটিয়ে ফেটে বেরোতে ওদের বেশি কষ্ট হয়েছিল, নাকি এখন?
লিটল প্রিন্স
জিজ্ঞেস করেছিল, ভেড়া যদি গাছ খেয়েই নেবে, তাহলে গোলাপের কাঁটা কি কাজে লাগে? কি কাজে
লাগে, সত্যি! গোলাপ কি সোহাগ চায়, নাকি আক্রমণের জন্য কাঁটায় শান দেয়? আমরা যে তুলে
আনি প্রেমিককে দেবো বলে, গোলাপ কি ভালবাসা বোঝে? নাকি মৃত্যুর স্বাদ, স্রেফ? গোলাপ
কি ওর কাঁটাকে ভালবাসে, বিশ্বাস করে? বিশ্বাস ভঙ্গ হয়, ওর?
আমরা কি জানি,
আদৌ? জানতে পারব, কোনদিন?
No comments:
Post a Comment
Did you like it? Did you not? Please leave a comment...